Adds

হাদীস কাকে বলে? হাদীস কত প্রকার ও কি কি? হাদীস কি শরীয়তের উৎস?


BongoCyber Blog:

হাদীস (حَدِيْث) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। 


হাদীসের সংজ্ঞা এবং শ্রেণীবিভাগ:

হাদীসের আরেকটি অর্থ হলো: কথা, বাণী, সংবাদ, বিষয়, অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি। ফক্বীহগণের পরিভাষায়, নবী কারীম (ﷺ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, করেছেন, অথবা যা বলার ও করার অনুমতি দিয়েছেন বা সমর্থন জানিয়েছেন, সেটাই হাদীস। সাহাবায়ে কিরামের কথা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস বলা হয়। ইমাম নববী এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, সাহাবীদের কথা, কাজ কিংবা অনুরূপ কিছু বর্ণনা হলে তা পর পর মিলিত বর্ণনাকারীদের দ্বারা বর্ণিত হোক কিংবা মাঝে কোন বর্ণনাকারী অনুপস্থিত থাকলে তা ‘মওকুফ হাদীস’ হিসেবে বিবেচিত হবে। পরবর্তীতে উসুলে হাদীসে তাদের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম ‘আসার’ এবং হাদীসে ‘মওকুফ’।


হাদীসের প্রকারভেদ:

মুহাদ্দিসগণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ অনুযায়ী, হাদীসকে প্রাথমিকভাবে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:


1. কাওলী হাদীস: রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র মুখের বাণী।

2. ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (ﷺ) নিজে করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন।

3. তাকরীরী হাদীস: সাহাবীদের যেসব কথাবার্তা বা কাজের প্রতি রাসূল (ﷺ) সমর্থন জানিয়েছেন।


রাবীদের সংখ্যা অনুসারে হাদীস তিন প্রকার:

1. খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন, তাদের মিথ্যা বলার সম্ভাবনা নেই।

2. খবরে মাশহুর: প্রতি যুগে অন্তত তিনজন রাবী যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

3. খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: যেসব হাদীস গরীব ও মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীসকে একত্রে খবরে আহাদ বলে।


রাবীদের সিলসিলা অনুসারে হাদীস তিন প্রকার:

1. মারফু হাদীস: যে হাদীসের সনদ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে।

2. মাওকুফ হাদীস: যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে।

3. মাকতু হাদীস: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌঁছেছে।


রাবী বাদ পড়ার দিক থেকে হাদীস দুই প্রকার:

1. মুত্তাসিল হাদীস: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা পুরোপুরি অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

2. মুনকাতে হাদীস: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে।


মুনকাতে হাদীসের তিন প্রকার:

1. মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে।

2. মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে।

3. মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা তার বেশি রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বাদ পড়েছে।


বিশ্বস্ততা অনুযায়ী হাদীস তিন প্রকার:

1. সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে এবং সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বিশ্বস্ততা ও স্মৃতিশক্তি প্রখর।

2. হাসান হাদীস: সহীহ হাদীসের গুণাবলী রয়েছে, তবে কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয়।

3. যায়ীফ হাদীস: যে হাদীসে সহীহ ও হাসান হাদীসের গুণাবলী অনুপস্থিত।


এছাড়াও, হাদীসে কুদসী হল এমন হাদীস, যার মূল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল (ﷺ)-কে ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন এবং রাসূল (ﷺ) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন।


সহীহ ও হাসান হওয়ার শর্তাবলী:

মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায়, যে হাদীসের মধ্যে পাঁচটি শর্ত বিদ্যমান, তাকে সহীহ হাদীস বলা হয়:


1. সনদ মুত্তাসিল হওয়া।

2. শায না হওয়া।

3. মু‘আল না হওয়া।

4. রাবির আদিল হওয়া।

5. রাবির দ্বাবিত হওয়া।


হাসান হাদীসের শর্তাবলীও একই, তবে রাবির দ্বাবত দুর্বল হতে পারে।

যয়ীফ হাদীস:

যে হাদীসে হাসান হাদীসের শর্তগুলোর কোনো একটি অনুপস্থিত, তাকে যয়ীফ হাদীস বলা হয়।


যয়ীফ হাদীসের তিনটি পর্যায় রয়েছে:

1. কিছুটা দুর্বল।

2. অত্যন্ত দুর্বল।

3. মাউযূ বা বানোয়াট হাদীস।


জানা দরকার, জমহুর ওলামাদের মতে যয়ীফ বা দুর্বল হাদীস কখনোই আমলযোগ্য নয়।


হাদীস কি শরীয়তের উৎস?

মুসলিম উম্মাহ এ বিষয়ে একমত যে, রাসূল (ﷺ)-এর কথা, কর্ম ও সম্মতি ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম উৎস। বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীস ইসলামী শরী‘আতের মৌলিক উৎস। ইসলামী শরী‘আতের প্রধান দু’টি উৎস হলো; পবিত্র কুরআন এবং রাসূল ﷺ এর সহীহ হাদীস।


হাদীসের প্রতি আমল না করে কেউ মুমিন হতে পারে না। এর ফলে, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হাদীস ও তার সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়া অপরিহার্য। কেননা হাদীসের সত্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ মুসলিম থাকতে পারে না।


উল্লেখযোগ্য, পবিত্র কুরআনের পর হাদীস শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস। হাদীসের উপর আমল ব্যতীত শরী‘আতের কোনো একটি বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করা সম্ভব নয়।



Post a Comment

0 Comments